mahabubalkiran1's Profile Pictures album on Photobucket

Tuesday, 28 May 2013

বুক জ্বলা, পেটে চিনচিনে ব্যথা ?


বুক জ্বলা, পেটে চিনচিনে ব্যথা?

 
bukjola
বুক জ্বলা, পেটের মাঝখানে চিনচিনে ব্যথা, পেট ফাঁপা ও ভার বোধ হওয়া, বুক-পেটে চাপ অনুভূত হওয়া—এসব হয়নি এমন মানুষ পাওয়া ভার। প্রচলিত কথায় একে বলে পেটে গ্যাস হয়েছে। পাকস্থলী থেকে খাদ্য হজম করার জন্য নির্গত হয় শক্তিশালী হাইড্রোক্লেরিক অ্যাসিড। যা পাকস্থলীকেই যেন হজম করে না ফেলে, সে জন্য এটির দেয়ালে থাকে প্রতিরোধী আবরণ। কোনো কারণে এই প্রতিরোধশক্তিতে ফাটল দেখা দিলে বা অতিরিক্ত অ্যাসিড নিঃসৃত হতে থাকলে পুরো ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়। একে বলে গ্যাস্ট্রিক আলসার।
কিছু সাধারণ নিয়মকানুন পালন করলে এই গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা অনেকটাই কমানো যায়।
১. নির্দিষ্ট সময়ে খাদ্য গ্রহণ করুন। পাকস্থলী নির্ধারিত সময়ে অ্যাসিড তৈরি হয়। এ সময় পেটে খাবার না পেলে সে নিজের দেয়ালেরই ক্ষতি করতে শুরু করে।
২. একবারে অতিরিক্ত পরিমাণ খাবার না খেয়ে সারা দিনের খাবারটাকে বেশ কয়েক ভাগে ভাগ করে নিন। অনেকক্ষণ একটানা না খেয়ে থাকবেন না। মূল খাদ্য যেমন প্রাতরাশ, মধ্যাহ্নভোজ বা নৈশভোজ কখনো একবারে বাদ দেবেন না। অনেকেই প্রাতরাশ না খেয়েই বাইরে চলে যান, অনেকে আবার খাদ্যনিয়ন্ত্রণের নামে নৈশভোজ না করেই শুয়ে পড়েন, এগুলো মোটেই ভালো অভ্যাস নয়।
৩. ঘুমানোর কমপক্ষে দুই ঘণ্টা আগে রাতের খাবার সেরে নিন। খাবার পর বসে পত্রিকা বা বই পড়ুন, অথবা টেলিভিশন দেখুন।
৪. ঘুমানোর সময় লক্ষ্য রাখুন, মাথা শরীরের চেয়ে ৬ থেকে ৮ ইঞ্চি ওপরে আছে কি না। অনেক সময় শোবার সমস্যার কারণে পাকস্থলীর খাবারসহ অ্যাসিড ওপরের দিকে ঠেলে আসে।
৫. ওজন কমান। মেদভুঁড়ি নিয়ন্ত্রণ করুন।
৬. ধূমপান, তামাক ও মদ্যপান এড়িয়ে চলুন।
৭. অতিরিক্ত চা-কফি, চকলেট, তৈলাক্ত ও ভাজা পোড়া খাবার, বেশি মসলা ও তেল দিয়ে প্রস্তুত খাদ্য যথাসম্ভব এড়িয়ে চলাই ভালো।
৮. মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তাও অনেক সময় এই সমস্যা বাড়িয়ে দেয়। তাই মানসিক চাপ সামলানোর চেষ্টা করুন।
ডা. আ ফ ম হেলালউদ্দিন

ত্বকের চুলকানি কি করবেন


ত্বকের চুলকানি কি করবেন

 
ত্বক শরীরের সবচেয়ে বড় অঙ্গ এবং ইহার অনেক প্রকার গুরুত্বপূর্ণ কাজ রহিয়াছে। সাধারণত ত্বকের সুস্পষ্ট অনেক রোগের লক্ষণ হিসাবে চুলকানি হয়ে থাকে তবে ত্বকের রোগ ছাড়াও চুলকানি হতে দেখা যায়। দীর্ঘস্থায়ী বা তীব্র চুলকানি যথেষ্ট কষ্টদায়ক। ইহাতে কার্যক্ষমতা বাধাগ্রস্থ হয় এবং ত্বকও স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
ত্বকের অসুখের মধ্যে খোস পাঁচড়া, এটপিক, একজিমা, কনটাক্ট ডারমাটাইটিস, ডারমাটাইটিস হারপেটিফরমিস রোগে তীব্র চুলকানি হলেও সোরিয়াছিছ ওষুধের পার্শ প্রতিক্রিয়া, বুলাস চবসঢ়যরমড়রফ ও দাদ জাতীয় রোগে মৃদু চুলকানি হয়ে থাকে। চুলকানিতে এক ধরনের ওসসঁহড়ষড়মরপধষ প্রতিক্রিয়া বিদ্যামান।
ত্বকের সুষ্পষ্ট রোগ ছাড়াও যকৃতের রোগ, বৃক্ক বা কিডনির রোগ, রক্তেররোগ, থাইরয়েড গ্লান্ডের রোগ, এইচ.আই.ভি. ইনফেকশন, ক্যান্সার, গর্ভাবস্থায় চুলকানি, কিছু কিছু মানসিক রোগসহ আরো অনেক অসুখে চুলকানি হতে দেখা যায়। ত্বকের সুস্পষ্ট অসুখের অনুপস্থিতিতে চুলকানি হলে অনুসন্ধান করে ধৈর্য্য ধারন করে মূল অসুখটিরও চিকিৎসা করতে হবে। সাধারণ চুলকানিতে বাহ্যিক প্রয়োগের নন-ষ্টারয়েড লোশন ব্যবহার করা নিরাপদ। অপেক্ষাকৃত জটিল চুলকানিতে আক্রান- স্থানের অবস্থান, আয়তন এবং রোগের তীব্রতা অনুযায়ী সঠিক ক্ষমতা সম্পন্ন ষ্টারয়েড জাতীয় ওষুধ বাহ্যিক ব্যবহার করা যেতে পারে। অধিকতর জটিল চুলকানি এবং জবংরংঃধহঃ ঠধৎরবঃু ড়ভ টৎঃরপধৎরধ-এর ক্ষেত্রে এন্টিহিষ্টামিন (অহঃরযরংঃধসরহব) ও বিশেষ ক্ষেত্রে ইম্যুনোসার্প্রেসিভ ওসসঁহড় ঝঁঢ়ঢ়ৎবংংরাব জাতীয় ওষুধ মুখে সেবনের প্রয়োজন হয়। কোন কোন মুখে সেবনের ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে বিধায় রোগীর পেশা অনুযায়ী সাবধানে ওষুধ নির্বাচন করতে হয়।
ডা: এম এ রহমান
সিনিয়র কনসালটেন্ট
সরকারী কর্মচারী হাসপাতাল, ঢাকা।
চেম্বার: ক্যাশ এন্ড ক্যারি ফার্মা, আরামবাগ, মতিঝিল, ঢাকা।

বিয়ের আগে দাঁতের যত্ন


বিয়ের আগে দাঁতের যত্ন

 
teeth
বিয়ে মানুষের জীবনে একটি নতুন ধাপ। বিয়ে মানে দুটি মনের ব্যবধানকে শূন্যে নিয়ে এসে সামাজিকভাবে একে অপরকে স্বামী স্ত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা।
আগের দিন গুরুজনেরা কনে পছন্দ করতেন হাঁটা-চলা পড়াশোনা (কলমা জানা) গায়ের রঙ দেখার মাধ্যমে। দিন পাল্টেছে। এখন পাত্র-পাত্রীর শিক্ষাগত যোগ্যতাই এখন বেশি প্রাধান্য দেয়। তারপরও মুখাবয়ব যত সুন্দরই হোক না কেন হাসতে বা কথা বলতে গিয়ে যদি দেখা যায় বর/কনের ভাঙ্গা দাঁত, ফাঁকা দাঁত, মুখে দূর্গন্ধ, কালো দাগযুক্ত দাঁত ইত্যাদি তাহলে উভয়ের পছন্দের মাঝে ডাটা পড়তেই পারে। এজন্য বিয়ের আগে বর-কনের শারিরীক সুস্থতার পাশাপাশি মুখের সুস্বাস্থ্যও নিশ্চিত করতে হবে।
যেমন বরের ক্ষেত্রে যে সমস্যাগুলো দেখায়-
০ ছেলেরা স্বভাবতই ধূমপান করে, ফলে দাঁতে কালো দাগ পড়ে। অতিরিক্ত চা-কফি পানেও এটি হতে পারে।
০ মুখে দূর্গন্ধ থাকতে পারে।
০ দাঁতে পাথর জমতে পারে।
০ পানের দাগ থাকতে পারে।
০ ভাঙ্গা দাঁতের উপস্থিতি।
০ দাঁতে ক্যারিজ থাকতে পারে।
কনের বেলায় থাকতে পারে-
০ মাড়ি লালচে এবং ফোলা ভাব।
০ মুখে দূর্গন্ধ।
০ আঁকা-বাঁকা, ফাঁকা দাঁত থাকতে পারে।
০ বিবর্ণ দাঁত।
উল্লেখিত সমস্যাগুলো বর-কনে উভয়েই থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে সমস্যানুযায়ী প্রতিকারও আছে যেমন-
০ ধূমপান সহ অতিরিক্ত চা-কফি পানের ফলে দাঁতে কালচে দাগের সৃষ্টি হয়। সেক্ষেত্রে স্কেলিং, স্টেইন রিমুভিং ও পলিশিং এর মাধ্যমে অবাঞ্চিত দাঁত দূর করাতে হবে।
০ মুখের দূর্গন্ধের নানা কারণ আছে। যেমন-
১. কিছু খাবার আছে যা খেলে মুখে দুর্গন্ধ হয় যেমন বেশি মসলাদার খাবার, কাঁচা পেয়াজ-রসুন খাওয়া ইত্যাদি।
২. বহুদিন যাবত দাঁতে পাথর জমলে।
৩. মাড়িতে ইনফেকশন থাকলে।
৪. দীর্ঘদিন যাবত ফুসফুসের ইনফেকশনে ভুগলে।
৫. সাইনুসাইটিস থাকলে।
৬. দাঁতে ক্যারিজ থাকলে।
৭. মুখে আলসার থাকলে।
৮. মুখে ফাংগাল ইনফেকশন থাকলে ইত্যাদি।
উক্ত সমস্যাগুলো যদি থেকে থাকে তবে তার যথাযথ চিকিৎসা ডেন্টাল সার্জনের মাধ্যমে করিয়ে নিতে হবে।
০ দাঁতে পাথর জমলে অবশ্যই স্কেলিং পলিশিং করিয়ে নিতে হবে।
০ দাঁতে পানের দাগসহ কঠিন কোন দাগ থাকলে ব্লিচিং করিয়ে নেয়া যেতে পারে।
০ মুখে ভাঙ্গা-ফাটা ক্ষয়ে যাওয়া দাঁত থাকলে ক্যাপ বা ক্রাউন করে নিলে হারানো সৌন্দর্য পুরোপুরি ফিরে পাওয়া সম্ভব।
০ চোয়ালে কোথাও দাঁত না থাকলে ব্রীজের মাধ্যমে তা প্রতিস্থাপন করে নিতে হবে।
০ দাঁতে ক্যারিজ থাকলে তার অবস্থান, বিস্তৃতি ও রোগের ইতিহাস জেনে দরকার হলে এক্সরে করে ফিলিং বা রুট ক্যানেল ক্যাপ করে দাঁতের হারিয়ে যাওয়া সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনতে হবে।
০ সুন্দর চেহারা, গায়ের রঙ ভাল ত্বক সবই উপস্থিত কিন্তু হাসলেই দেখা যায় লাল টকটকে ফোলা মাড়ি তখন সবই মাঠে মারা যায়। এক্ষেত্রে মাড়ির চিকিৎসা করাতে হবে।
০ আঁকা-বাঁকা ফাঁকা দাঁতের চিকিৎসা করাতে হবে। যেহেতু এই চিকিৎসা একটু ব্যববহুল ও সময় সাপেক্ষ তাই বিয়ের কমপক্ষে এক দেড় বছর আগে থেকে এই চিকিৎসা শুরু করতে হবে।
০ অনেক রোগীই বলেন, ‘দিনে ৪ বার দাঁত ব্রাশ করি তবুও দাঁত হলুদ, নিঃস্প্রাণ’, আর কি করলে দাঁত সাদা চকচকে সুন্দর হবে।’ আসলে বিবর্ণ দাঁতের অনেক কারণ আছে। যেমন-
১. আঘাতের ফলে সৃষ্ট বিবর্ণ দাঁত।
২. টেট্রাসাইক্লিন পিগমেন্টেশন।
৩. জনগত কারণ ইত্যাদি।
সমস্যা ও রোগের ইতিহাস জেনে দাঁত পরীক্ষা করে বিবর্ণ দাঁতে বিভিন্ন রকম চিকিৎসা দেয়া যেতে পারে। যেমন লেমিনেটিং ফিলিং, ক্রাউন ইত্যাদি হতে পারে। এছাড়াও দাঁতে ব্লিচ করা যেতে পারে। এতে দাঁত হবে ঝকঝকে সুন্দর-সাদা, বিশ্বসুন্দরী ঐশ্বরিয়া রায়ের দাঁতও ছিল হলদেটে বিবর্ণ। যথাযথ চিকিৎসার পর এখন তার দাঁত সুন্দর।
০ দাঁতে ব্যথা থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে ব্যথার কারণ খুঁজে যথাযথ চিকিৎসা করাতে হবে।
০ এছাড়াও পেহাটাইটিস, এইড্‌স ইত্যাদি পরীক্ষা করে নেয়া যেতে পারে। স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। একে পরিপূর্ণ রাখতে সুস্থ দাঁত ও মাড়িও বাদ পড়ে না। বিয়ের আগে হবু দম্পতির শারিরীক সুস্থতার পাশাপাশি মুখের সুস্থতাও অত্যন্ত জরুরি। মুখের যেকোনো সমস্যায় যথাযথ চিকিৎসার জন্য অবশ্যই অভিজ্ঞ ডেন্টাল সার্জনের পরামর্শ নিতে হবে। বছরে অন্তর দু’বার আপনার ডেন্টাল সার্জনের পরামর্শ নিন।
ডা. নাহিদ ফারজানা
দন্ত রোগ বিশেষজ্ঞ,
চেম্বার : নাহিদ ডেন্টাল কেয়ার
২১৬/বি, এলিফ্যান্ট রোড

ভালো ঘুমের জন্য টিপস্‌


ভালো ঘুমের জন্য টিপস্‌


সকলে চায় সারাদিনের ক্লান্তি শেষে রাতে ভালো ঘুম হউক। আর অনেকে ঘুমের জন্য কতনা যুদ্ধ করেন। শেষ পর্যন্ত অনেককে ঘুমের ওষুধ পর্যন্ত সেবন করতে হয়। তবে ভালো ঘুমের জন্য যা জানা দরকারঃ
০ নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে যাতে শরীরে অবসাদ না পেয়ে বসে।
০ সন্ধ্যা ৭টার পর কফি বা ক্যাফেইন সমৃদ্ধ খাবার ও পানীয় থেকে বিরত থাকুন।
০ ঘুমাতে যাবার অন্তত: ১ ঘন্টা পূর্ব থেকে কোন চিন্তার কাজ করবেন না। টোটাল রিল্যাক্সড মুড়ে থাকতে হবে।
০ ঘুমানোর ঘরটি হতে হবে একেবারেই কোলাহলমুক্ত।
০ ঘুমানোর সময় সব ধরণের বাতি নিভিয়ে দিন।
০ যদি ঘুম আসতে বিলম্ব হয় তবে খানিকটা লম্বা শ্বাস নিন।
০ সম্ভব হলে ১ গ্লাস হালকা গরম দুধ পান করুন।
০ রাতে গোসলের পর অয়েল ম্যাসাজ নিতে চেষ্টা করুন।
০ এসব করেও যদি ঘুম না আসে তখন চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
ডা: মোড়ল নজরুল ইসলাম

বিষাদ বিদায় শেষে


বিষাদ বিদায় শেষে

 
nafisa
জীবনের কোনো না কোনো পর্যায়ে আমরা যে কেউ ডিপ্রেশনে বা হতাশায় ভুগতে পারি। ডিপ্রেশন বা হতাশা কোন স্থায়ী রোগ নয়। যদিও অনেক বিশেষজ্ঞের মতে ডিপ্রেশনকে রোগ বলে গন্য করা হয়। কোনো কারণে দুঃখকষ্ট যখন আমাদের মনে গভীরভাবে বসে যায়, তার ফলে আমরা যখন আমাদের স্বাভাবিক কাজগুলো করতে পারি না তখনই ডিপ্রেশনের উদ্ভব হয়। দিনে দিনে এই ডিপ্রেশন ক্লিনিক্যাল ডিপ্রেশন বা ডিপ্রেসিভ ডিজঅর্ডার-এ রূপ নেয়। এর পরিণতি খুব ভাল নয়, তা আমাদের জানা। তাই ডিপ্রেশন উড়িয়ে দিয়ে কিভাবে স্বাভাবিক জীবন যাপন করা যায় তার কিছু টিপ্‌স জেনে নেয়া যাক-
০০ বিষাদ কাটাতে পছন্দসই কাজে ব্যস্ত থাকুন।
০০ প্রতিদিন একই রুটিনের জীবন-যাপন থেকে বেরিয়ে আসুন।
০০ প্রতিদিনের রুটিনে কিছু বিনোদনের সময় রাখুন। যেটা ঘরে বসে টিভি দেখা না হয়ে সিনেমা কিংবা মঞ্চে নাটক দেখা হতে পারে।
০০ যার সহচার্য ভাল লাগে তার সঙ্গে সপ্তাহে একবার আড্ডা দিন। পারলে প্রতিদিন ফোনে কথা বলুন।
০০ মাঝেমধ্যে গেটটুগেদার করুন।
০০ কর্মজীবী বলে বাড়ির কাজ করা হয়না অবসরে। একঘেয়ে ভাব দূর করতে ছুটির দিনে ঘরকন্যার কাজ করতে পারেন।
০০ যান্ত্রিকজীবন থেকে বেরিয়ে আসতে নিজে বারন্দায় গাছ লাগাতে পারেন। কোন কারণে মন বিষন্ন হলে প্রবাসী বন্ধুর সাথে চ্যাটিং করে অন্য পরিবেশে প্রবেশ করুন। বেড়াতে যান দূরে কোথাও।
০০ কাজের ব্যস্ততাকে দূরে ফেলে দু-তিন দিন সময় করে প্রকৃতির কাছাকাছি চলে যান।
০০ আপনজনের সাথে নিজের আনন্দের স্মৃতিগুলো নিয়ে আলোচনা করুন। চলে যান শৈশবে।
০০ পরিবারের সবাইকে নিয়ে দেশের বাড়িতে যেতে পারেন। নিজের শেকড় চিনতে দিন নতুন প্রজন্মকে।
০০ সমর্থ হলে প্রতিবেশি কোন দেশে ট্যুর করতে পারেন।
লক্ষ্যণীয়
০০ এক জায়গায় আটকে থকবেন না।
০০ ইতিবাচক চিন্তা করুন।
০০ আত্মমর্যাদা বৃদ্ধি করুন।
০০ যেকোনো সম্পর্কের ক্ষেত্রে নিঃস্বার্থ হোন
০০ যেকোনো সমস্যা নিয়ে আলোচনা করুন। আলোচনার সময় নিরপেক্ষ হন।
০০ শেয়ার করুন। মন খুলে কথা বলুন।
০০ ভাল বই, ভাল গান এবং ভাল সিনেমা দেখুন।
০০ সবাইকে বন্ধু ভাবুন।
০০ শপিং করুন। নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকুন। বিউটিপার্লারে যেতে পারেন।
০০ খাবারের মেন্যুতে ভিন্নতা আনতে পারেন।
মডেল নাফিসা ছবি সাফাওয়াত খান সাফু

চোখ উঠলেই আঁতকে ওঠা নয়


চোখ উঠলেই আঁতকে ওঠা নয়

 
চোখ ওঠা রোগকে চিকিৎসাশাস্ত্রে কনজাংটিভাইটিস বা পিংক আই বলে। রোগটি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভাইরাসের কারণে হয়ে থাকে। কখনো কখনো রোগটি ব্যাকটেরিয়া, অ্যালার্জি কিংবা কেমিক্যালের কারণেও হতে পারে। এটা এক ধরনের ছোঁয়াচে রোগ। মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমিত হয়। আক্রান্ত ব্যক্তির ধরা বস্তু ও পানির মাধ্যমেও রোগটি ছড়াতে পাড়ে। প্রধান উপসর্গের মধ্যে চোখ লাল হওয়া, চোখে ঝাপসা দেখা, চোখ দিয়ে পানি পড়া এবং চোখের কোণে ময়লা জমা উল্লেখযোগ্য। অ্যালার্জিজনিত কারণে চোখ উঠলে প্রধান চিকিৎসা হলো চোখে ঠান্ডা পানির ঝাপটা দিতে হবে। এবং এ ক্ষেত্রে কখনো কখনো নন-স্টেরয়েড অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি ওষুধ অথবা অ্যান্টি হিস্টামিন দেওয়া যেতে পারে। ব্যাকটেরিয়াজনিত কারণে চোখ উঠলে কোনো ধরনের চিকিৎসা ছাড়াই এটি ভালো হয়ে যায়। আর যদি রোগটি তিন দিনের বেশি স্থায়ী হয় অ্যান্টিবায়োটিক চোখের ড্রপ অথবা মলম ব্যবহার করা যেতে পারে। ভাইরাসজনিত কারণে চোখ ওঠার নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। এ ক্ষেত্রে ঠান্ডা পানি এবং কৃত্রিম চোখের পানি দিলে ভালো ফল পাওয়া যাবে। কেমিক্যালের কারণে চোখ ওঠার ক্ষেত্রে রিঙ্গার ল্যাকটেট অথবা স্যালাইন পানি দিয়ে চোখ ধুতে হবে। কোন কারণে চোখ উঠেছে নিশ্চিত হতে হলে করতে হবে সোয়াব কালচার পরীক্ষা। প্রায় ৬৫ ভাগ ক্ষেত্রে কোনো ধরনের চিকিৎসা ছাড়াই চোখ ওঠা ভালো হয়ে যায়। এবং রোগটি স্থায়ী হতে পারে দুই থেকে পাঁচ দিন। তাই এই রোগ নিয়ে সত্যিই আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।
— সিদ্ধার্থ মজুমদার

মাথা খাটিয়ে মাথা ব্যথা দূর


মাথা খাটিয়ে মাথা ব্যথা দূর


ঘাড়ের উপর মাথা থাকলে ব্যথাতো হতেই পারে। আর একটু আধটু ব্যথার জন্য নিজে নিজে ওষুধ খেয়ে ফেলাটাও কোন কাজের কথা না। আগে থেকে কিছুটা সতর্ক হলে মাথা ব্যথার মতো ঝামেলা এড়ানো যায় কিন্তু সহজেই।
মাছের তেলে
মাছ খেতে হবে প্রতি বেলায়। পুষ্টির চাহিদা তো মিটবেই মাথা ব্যথা প্রতিরোধেও কার্যকর মাছ। মাছের তেলে থাকে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড। এটিই মূলত মাথা ব্যথার বিরুদ্ধে কাজ করে। মাছের তেলের ক্যাপসুল পাওয়া যায় বাজারে। চিকিৎসকের পরামর্শে নিয়ম করে খেতে পারেন ক্যাপসুলটি।
আপেলে
রোজ সকালে ঘুম থেকে উঠেই যারা মাথা ব্যথায় ভোগেন তাদের সমাধান আপেলে। আপেলের বাইরের আস্তরন ফেলে সামান্য লবণ মিশিয়ে খেতে হবে সকালে খালি পেটে। এভাবে চলবে টানা দুই সপ্তাহ।
আদা
আদার উপাদানগুলো থ্রম্বোক্সিনকে কাজে লাগিয়ে শরীরে রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখে। যেটা মাইগ্রেইনের ব্যথা প্রতিরোধে খুব কার্যকর। এ ছাড়া আদায় বমিভাব দূর হয়, দূর হয় মাথা ব্যথা।
বসার ভঙ্গিতে
দেহকে বাকিয়ে বা হেলে দীর্ঘক্ষণ বসলে স্নায়ুকোষ উদ্দীপ্ত হয়। এ থেকে তৈরি হতে পারে মাথা ব্যথার মতো অনাবশ্যক সব রোগ। তাই বসতে হবে সোজা হয়ে। দাঁড়াতে হবে আরও সোজা হয়ে।
সিদ্ধার্থ মজুমদার

ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য মেথি


ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য মেথি

 
মেথিকে মসলা, খাবার, পথ্য—তিনটাই বলা চলে। মেথির স্বাদ তিতা ধরনের। এতে রয়েছে রক্তের চিনির মাত্রা কমানোর বিস্ময়কর শক্তি। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে মেথি চিবিয়ে খেলে বা এক গ্লাস পানিতে মেথি ভিজিয়ে রেখে সেই পানি খেলে শরীরের রোগ-জীবাণু মরে, বিশেষত কৃমি মরে, রক্তের চিনির মাত্রা কমে। রক্তে ক্ষতিকর কোলেস্টেরল বা চর্বির মাত্রা কমে যায়। এই গরমে ত্বকে যে ঘা, ফোড়া, গরমজনিত ত্বকের অসুখ হয়, এই অসুখগুলো দূর করে মেথি। বার্ধক্যকে দূরে ঠেলে দিয়ে তারুণ্যকে দীর্ঘস্থায়ী করতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে মেথি। গবেষণা করে দেখা গেছে, যে ডায়াবেটিক রোগীরা নিয়মিত মেথি খান, তাঁদের ডায়াবেটিসজনিত অসুখগুলো কম হয় এবং স্ট্রোক হওয়ার প্রবণতা তুলনামূলকভাবে কম। ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য মেথি শ্রেষ্ঠ পথ্য।
যাদের ডায়াবেটিস নেই মেথি তাদের জন্যও জরুরি। মাতৃদুগ্ধ বৃদ্ধির জন্য কালো জিরার মতো মেথি পিষে খাওয়াটাও যথেষ্ট উপকার। তবে খেয়াল রাখতে হবে, মেথি ভেজে পিষলে পুষ্টি সব নষ্ট হয়ে যাবে। রৌদ্রে শুকিয়ে নিয়ে ভাজলে খেতে মচমচে লাগবে। মেথি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, শরীরকে রাখে সতেজ। রক্তের উপাদানগুলোকে করে কর্মক্ষম। ফলে মানুষের কর্মোদ্দীপনাও বৃদ্ধি পায়। মৌসুমি রোগগুলোর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। নানাবিধ গুণের জন্যই মেথি হোক আপনার পরিবারের সদস্য।
ফারহানা মোবিন

মাছ খাবেন ভালো থাকবেন


মাছ খাবেন ভালো থাকবেন

 
fish
তবু মাছ খেতে বলব।
ফরমালিন দেওয়া হচ্ছে, এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলুন।
মানুষ না চাইলে কোনো ব্যবসা চলতে পারে না। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা সম্প্রতি দেখেছেন, যাঁরা প্রতি সপ্তায় তৈলাক্ত মাছ খান, যেসব মাছে আছে প্রচুর ওমেগা-৩ মেদ অম্ল—এদের করোনারি হূদেরাগে মৃত্যুর ঝুঁকি কমে ৩৬ শতাংশ। যাঁরা নিয়মিত মাছ খান, তাঁদের স্ট্রোক, বিষণ্নতা, বয়সের কারণে মগজের অধোগতি ঝুঁকি কম। অনেক ক্রনিক অবক্ষয়ী রোগের শঙ্কাও তাঁদের কম।
শীতল পানির মাছের কথাই বেশি বলা হয়, যেমন—স্যামন, ট্রাউট, টুনা, তেলাপিয়া। আবার এসব মাছ খামারেও হয়।
বিশেষজ্ঞরা দেখছেন, খামারে চাষ করা এসব মাছের মধ্যে কোন মাছটি কম হূদ্স্বাস্থ্যকর। বলছেন তেলাপিয়া মাছের কথা। এতে নাকি ওমেগা-৩ মেদ অম্ল কম, সে জন্য কম হূদ্স্বাস্থ্যকর টুনা, স্যামন, ট্রাউট মাছের চেয়ে। তেলাপিয়ায় বেশি আছে ওমেগা-৬ মেদ অম্ল—এই অম্লও স্বাস্থ্যকর বটে।
মাছ খাওয়া স্বাস্থ্যকর কেন? বিশেষ করে হূদ্স্বাস্থ্যকর?
কারণ এতে রয়েছে ওমেগা-৩ মেদ অম্ল। মাছ ও মাছের তেলে যে ধরনের ওমেগা-৩ মেদ অম্ল রয়েছে, এর নাম হলো ইপিএ ও ডিএইচএ। মাছে আছে ওমেগা-৬ মেদ অম্লও। স্বাস্থ্যের জন্য এও ভালো।
ওমেগা-৩ শরীরে বিশেষ তৈরি হয় না, তাই এর জোগান লাগে। ওমেগা-৬ শরীরে আসে মাছ ছাড়াও অন্যান্য উ ৎস থেকে।
আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন বলে, হূদ্সুখের জন্য সপ্তাহে মাছের অন্তত দুটো সার্ভিং অবশ্য চাই। প্রতিটি সার্ভিং মানে ৩ দশমিক ৫ আউন্স রান্না করা মাছ বা ৩/৪ কাপ (এক কাপের চার ভাগের তিন ভাগ) মাছ।
যুক্তরাষ্ট্রের ইউএসডিএর পরামর্শ, সপ্তাহে ৮ আউন্স মাছ। মিষ্টি পানি বা লোনা পানি—দুটোরই মাছ।
শামুকজাতীয় মাছে চর্বি সবচেয়ে কম। থাইল্যান্ডে দেখেছি, মানুষ শামুক খায় অবলীলায়, খুঁটে খুঁটে।
সেলফিশ—এমনকি কাঁকড়া, গলদাচিংড়ি, শামুক—এসব মাছ। অবশ্য চিংড়ি মাছের মগজে খুব কোলেস্টেরল। সেলফিশে আনস্যাচুরেটেড চর্বি বেশি, স্যাচুরেটেড চর্বি কম। প্রোটিনও আছে।
আটলান্টিক মহাসাগরের স্যামন মাছে ওমেগা-৩ মেদ অম্ল সবচেয়ে বেশি। ৪ আউন্স স্যামন মাছে ১২০০-২৪০০ মিলিগ্রাম ওমেগা-৩ মেদ অম্ল আছে।
নদী আর সমুদ্রের মাছের চেয়ে খামারে চাষ করা মাছে ওমেগা-৩ মেদ অম্ল কম—এ কথাও ঠিক নয় পুরোপুরি।
কিছু প্রজাতি যেমন স্যামন, ম্যাকবিল, হেরিং, ট্রাউট—এরা খামারে হোক বা খরস্রোতা নদীতে বা সাগরে হোক, ওমেগা-৩ বেশি থাকে।
আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, মাছ থেকে ওমেগা-৩ মেদ অম্ল আহরণ করাই শ্রেষ্ঠ। তবে যাঁরা হূদেরাগের রোগী বা যাঁরা কোনো কারণে যথাযথ পরিমাণ ওমেগা-৩ পাচ্ছেন না খাবারে, মাছের তেল সাপ্লিমেন্ট গ্রহণই ভালো। তবে চিকি ৎসককে জিজ্ঞেস করে নেবেন। মাছকে কেমিক্যাল দিয়ে দূষিত করে বাজারজাত করা যেমন একটি স্বাস্থ্যঝুঁকি, তেমনি স্বাস্থ্যঝুঁকির ব্যাপারে জলজ প্রাণী মাছও নানা কারণে জলাশয়ে ডায়োক্সিন, পিসিবি, পারদ ও কীটনাশক অন্যগুলো দ্বারা দূষিত হতে পারে। তাহলে মাছ খাব না? তা কেন? জঙ্গলে সাপ আছে বলে জঙ্গলে যাবে না? পথে যন্ত্রদানব আছে বলে, পথে নামব না? পথে নামব। প্রতিরোধও করব। মাছে মাঝেমধ্যে কৃমি, পরজীবী—এসব থাকতে পারে। তবে মাছ ভালো করে যথাযথ রান্না করলে এসব থাকে না। কাঁচা মাছ বা আধা সেদ্ধ মাছ খাওয়া ঠিক নয়। ফিতা কৃমির আশঙ্কা বেশি। মাছকে ১৪০০ ডিগ্রি তাপে যথাযথ রান্না করলে কীট, পরজীবী ধ্বংস হয়ে যায়। সঠিক হিমায়িত না থাকলে কাঁচা মাছ খাওয়া ঠিক নয়, রান্না করেও। পারদ বা কীটনাশকের জন্য গর্ভবতী মহিলা বা দুগ্ধবতী মহিলাকে মাছ থেকে বারণ করা ঠিক নয়—বলেছে ইউএসডিএ।
মাছের ছাল ছাড়িয়ে ফেললে কীটনাশক যেমন পিসিবি বা ডায়োক্সিন দূষণ অনেক কমে যায়। সামুদ্রিক মাছ বেশ স্বাস্থ্যকর; তবে অনেকের অ্যালার্জি হয়। চিংড়ি, শামুক, কাঁকড়াতে অনেকের অ্যালার্জি। মাছ ভাজা স্বাস্থ্যকর নয় বলে জানায় হূদেরাগ সমিতি। সেঁকা, ভাপে সেদ্ধ ও ঝলসানো মাছ ভালো।
অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরী
পরিচালক, ল্যাবরেটরি সার্ভিসেস বারডেম হাসপাতাল,
সাম্মানিক অধ্যাপক, ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ, ঢাকা।

চোখের জ্বালাপোড়ায় করণীয়


চোখের জ্বালাপোড়ায় করণীয়

 
কারণ কী?
 চোখের পানি শুকিয়ে যাওয়া
 চোখের অ্যালার্জি
 বাতরোগ
 চোখের পাপড়ির গোড়ায় প্রদাহ
 চোখের অপারেশন
 ঘুমের সময় চোখ বন্ধ না হওয়া
 চোখের কালো মণিতে ভাইরাস সংক্রামণ
 কালো ধোঁয়া, ধুলোবালি চোখে পড়লে
 চোখে রাসায়নিক পড়লে। যেমন—চুন, এসিড ইত্যাদি
 চোখে ওষুধের রিঅ্যাকশন হলে (স্টিভেন জনসন সিনড্রোম)
 চোখের ড্রপ ব্যবহারেও প্রাথমিক অবস্থায় চোখ জ্বলতে পারে।
করণীয়
 রাস্তাঘাটের কালো ধোঁয়া ও ধুলোবালি থেকে চোখ রক্ষা করার জন্য সানগ্লাস ব্যবহার করুন।
 চোখের পানি কমে গেলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে চোখে কৃত্রিম চোখের পানি ড্রপ হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
 পানি শুকিয়ে যাওয়ার কারণ যেমন—বাতরোগ, শোগ্রেন সিনড্রোম ইত্যাদি রোগের চিকিৎসা করাতে হবে।
 সালফার-জাতীয় ওষুধে যাদের অ্যালার্জি আছে, তাদের তা বর্জন করতে হবে।
 চিকিৎসকের পরামর্শে চোখের অ্যালার্জি এবং কর্নিয়ায় ভাইরাস সংক্রমণের চিকিৎসা করাতে হবে।
 চোখ বেশিক্ষণ বন্ধ রাখলে অনেক ক্ষেত্রে চোখের জ্বালা কমে। সে জন্য পর্যাপ্ত ঘুমের প্রয়োজন।
 চোখে কেমিক্যাল পড়লে সঙ্গে সঙ্গে চোখে বেশি করে পানি দিয়ে অনেক সময় ধরে ধুয়ে ফেলতে হবে। তারপর দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
 চোখে ড্রপ দেওয়ার কারণে চোখ জ্বললে ভয় পাবেন না। আস্তে আস্তে কমে যাবে। মূল রোগের চিকিৎসা বন্ধ করবেন না। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন।
শামস মোহাম্মদ নোমান
চক্ষু বিশেষজ্ঞ, চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতাল ও প্রশিক্ষণকেন্দ্র পাহাড়তলী, চট্টগ্রাম

কেমন বয়সের মেয়ে বিয়ে করা উচিৎ


কেমন বয়সের মেয়ে বিয়ে করা উচিৎ

 
পুরুষের সমস্যা
ইতিপূর্বে একাধিকবার পুরুষের পাত্রী নির্বাচন এবং শারীরিক সমস্যা নিয়ে লিখেছি। এখনও আমাদের সমাজে অনেক ক্ষেত্রে ধারণা করা হয়ে থাকে পুরুষের আবার বিয়ের বয়স কিসের। পুরুষ মাত্রেই যে কোন বয়সের একটি মেয়েকে ঘরে তুলতে পারে কিন্তু বিষয়টির সামাজিক প্রেক্ষাপটের চেয়ে শারীরিক বিশ্লেষণ বেশী গুরুত্ব দেয়া উচিত। এই মুহূর্তে বিয়ের ক্ষেত্রে পাত্র-পাত্রীর বয়স নিয়ে লেখার কোন ইচ্ছেই ছিলো না। পুরুষের অন্য একটি বিষয় লিখবো ভেবেছিলাম। কারণ আমার এক পুরুষ রোগীর দীর্ঘদিন পর পিতা হবার চিকিৎসার পেক্ষাপট নিয়ে লিখতে চেয়েছিলাম। এ বিষয়টি পরে লেখা যাবে। যাহোক যা বলছিলাম, দু’তিন, দিন আগে আমার চেম্বারে একটা মেয়ে আসে। উজ্জ্বল শ্যামলা। শরীরের গড়ন হালকা। মেয়ে বললে ভুল হবে, কিশোরী বলাই ভালো। নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে বাড়ী। সোনারগাঁও বললে, আমি নানা কারণে কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়ি। তার একটি কারণ হচ্ছে আমার লেখনীর শিক্ষাগুরু প্রখ্যাত সাংবাদিক লেখক ও কলামিষ্ট জনাব শফিকুল কবির এর বাড়ী এই সোনারগাঁওয়ে। যাই হোক, সোনারগাওয়ের সেই মেয়েটি বললেন, আমি ফর্সা হতে চাই ডাক্তার সাহেব। আমি বললাম তুমিতো অনেক সুন্দর এবং তোমার গায়ের রং যথেষ্ট ভালো। মিয়েটিকে আশ্বস্ত করতে বললাম, আমার মেয়ের গায়ের রং ও তোমার মত। তাছাড়া ত্বক ফর্সা করার কোন চিকিৎসা নেই। আজকাল কিছু কিছু বিউটি পার্লারের অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হয়ে তরুণী-মহিলারা ছুটছেন তক ফর্সা করতে। আসলে ত্বক ফর্সা করার কোন ব্যবস্থা চিকিৎসা শাস্ত্রে নেই। বহুবার বলেছি আমি আমেরিকা ও সিঙ্গাপুরের দু’টি বিখ্যাত হাসপাতালে স্কিন, লেজার ও কসমেটিক সার্জারির ওপর উচ্চতর প্রশিক্ষণ নেয়ার সময় কখনও ত্বক ফর্সা করা সম্ভব এমন কথা শুনিনি। কখনও কেউ বললেনি ত্বক ফর্সা করা যায়। তবে আজকাল লেজার টেকনোলজির সুবাধে ত্বক ব্রাইট করা যায়, ফর্সা করা যায় না। মুখের ব্রাউন স্পট, পিগমেন্ট, তিল, মোল, আঁচিল, অবাঞ্ছিত লোম দূর করা যায়। ত্বক ফর্সা করার কোন লেজার ও চিকিৎসা এখনও বের হয়নি। তবে তথাকথিত হুয়াইটিনিয সিস্টেমের নামে মুখের ত্বক পুড়িয়েং দিয়ে ফর্সা করার মারাত্মক ক্ষতিকর উপায় নিয়ে দু’একটি বিউটি পার্লার প্রচার করে থাকে। এসব অবৈজ্ঞানিক মারাত্মক ক্ষতিকর হুয়াইটিং সিস্টেম নিয়ে আর একদিন বিস্তারিত লিখবো।
সোনারগাঁও এর ঐ মেয়েটির কাছে জানতে চাইলাম- তুমি কেন ত্বক ফর্সা করতে চাইছো। প্রথমে মেয়েটি সংকোচ বোধ করলেও সে জানালো আমার বিয়ে হয়েছে একমাস। স্বামী আমেরিকা প্রবাসী। বর্তমানে দেশে আছে। স্বামী চায় আরও ফর্সা ত্বক। এরপর জানতে চাই তোমার স্বামী কোথায়। মেয়েটি বললো ও আমার সঙ্গেই এসেছে। ধারণা ছিলো অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী ১৪/১৫ বছরের মেয়েটির স্বামীর বয়স ২০/২২-এর বেশী হবে না। ওমা বয়সে ৩৮/৪০ এর কম হবে না। প্রথম মিনিট খানেক ভীষণ রাগ হয়েছিলো। যাহোক, রোগীদের ওপর রাগ করার কোন অধিকার ডাক্তারের নেই। স্বাভাবিক হয়ে জানাতে চাইলাম আপনার নতুন বিবাহিত জীবন কেমন কাটছে। এরপর বেশখানিকটা সময় নিয়ে কথা হলো। ত্বক ফর্সা করার ভুল ধারণা ভেঙ্গে দিয়ে কিশোরী মেয়েটিকে বাইরে যেতে বললাম। এর পর মধ্যবয়স্ক যুবকের কাছে জানতে চাই কেন আপনার অর্ধেকের চেয়ে কম বয়সের একটি মেয়েকে বিয়ে করেছেন। যুবকটি কোন সদুত্তোর দিতে পারলেন না। এই যুবকটি ঢাকার একটি নামকরা কলেজ এবং একটি নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। এরপর যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। যুবকটি জানালেন এখনই তাদের ব্যক্তিগত জীবনে সমস্যা হচ্ছে। বললেন ডাক্তার সাহেব শরীর ঠিক রাখতে কোন ওষুধ দেয়া যাবে কিনা। আমি দু’একটি মামুলি প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা করতে দিয়ে আর একদিন আসতে বলি।
সুপ্রিয় পাঠক, আজ থেকে ১০ বছর পরের একটি দৃশ্যের কথা চিন্তা করুন। যখন সোনারগাওয়ের কিশোরী মেয়েটির বয়স হবে ২৫। পরিপূর্ণ এক যুবতী। আর যুবকটির বয়স হবে ৪৮/৫০। এ বয়সে নিশ্চয়ই দু’জনের চাওয়া-পাওয়ার ক্ষেত্রে থাকবে অনেক ব্যবধান। এখানে আজকের কিশোরীটির চিরায়ত বাঙালী চরিত্রের রূপায়ণ অর্থাৎ সব কিছু নিরবে মেনে নিয়ে বয়স্ক স্বামীর ঘর করা অথবা পরিবারের সকলের অমতে ভিন্ন চিন্তা করাই কিন্তু আমাদের মত রক্ষণশীল সমাজে সব সময় ছাড়া উপায় নেই। কাজটি করতে পারে না অথবা করে না। যাহোক, আমাদের দেশে এখনও আইন বলবৎ আছে মেয়েদের ১৮ বছরের নীচে এবং পুরুষের ২১ বছরের কম বয়স বিয়ে করা উচিত নয়। বয়সের পার্থক্য কেমন হবে তা অবশ্য আইনে বলা নেই। তবুও একজন নগন্য সেক্সোলজিষ্ট হিসেবে আমার নিজস্ব অ্যাসেসমেন্ট হচ্ছে বিয়ের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের বয়সের ব্যবধান বেশী থাকা বাঞ্ছনীয় নয়। এছাড়া কোন অবস্থাতেই মেয়েদের ১৮ বছরের নীচে বিয়ে দেয়া উচিত নয়। সম্ভব হলে মেয়েদের নূন্যতম বিয়ের বয়স ২০ বছর নির্ধারন করা উচিৎ। বিয়ের ক্ষেত্রে ছেলে-মেয়েদের একই বয়সী না হলে বয়সের ব্যবধান সর্বোচ্চ ৫/৭ বছরের মধ্যে থাকা ভালো। তবে যে কোন মেয়ে তার পরিপূর্ণ বয়সে যে কোন বয়সের পুরুষদের বিয়ে করার আইনগত অধিকার রাখেন। এটা নিশ্চয়ই তার নিজস্ব ব্যাপার। তবে অপরিণত মেয়েদের ক্ষেত্রে স্বামীর বয়স নির্ধারণ করার দায়িত্ব অবশ্যই অভিভাবক বা পিতা-মাতার। শারীরিক ও মানসিক সমস্যা এড়াতে অবশ্যই স্বামী-স্ত্রীর বয়সের ব্যবধান কম হওয়া উচিত। পাশাপাশি যদি কেউ বেশী বয়সে বিয়ে করতে চান তাদের অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করা উচিৎ। এতে ভবিষ্যতে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সৃষ্ট নানা সমস্যা এড়ানো যায়।
—————————–
ডাঃ মোড়ল নজরুল ইসলাম
চুলপড়া, যৌন সমস্যা, পুরুষ বন্ধ্যাত্ব চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ
এবং লেজার এন্ড কসমেটিক্স সার্জন
বাংলাদেশ লেজার স্কিন সেন্টার

অজ্ঞতার কারণে ভেঙ্গে যাচ্ছে শত শত বিয়ে


অজ্ঞতার কারণে ভেঙ্গে যাচ্ছে শত শত বিয়ে

 
অনেকে আমাকে বলছেন পুরুষের সমস্যা নিয়ে লেখাটি ভিন্ননামে প্রকাশ করা উচিৎ। অনেকে বলেছেন, এ ধরনের লেখা প্রকাশের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকা উচিৎ ইত্যাদি। আমি এ ধরনের সুশীল পাঠকদের সঙ্গে একমত। যে কারণে আমি সবসময় মার্জিত শব্দ ব্যবহার করার চেষ্টা করি। আসলে আমাদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে ধরনের পশ্চাদপদতা রয়েছে তারমধ্যে এটাও একটা। আমার মনে আছে দেশে এক সময় পাইলস-এর আধুনিক চিকিৎসা হতো না। বর্তমানে একজন সনামধন্য পাইলস চিকিৎসক আসলেন আমার কাছে। তা প্রায় এক যুগেরও বেশি সময় আগে। তার ইচ্ছে ছিলো ল্যাপারোস্কপিক সার্জন হবেন। ল্যাপারোস্কপি সার্জারীতে তখন জাপান ফেরৎ ডাঃ সরদার নাঈমের রমরমা অবস্থা। আমি ডাক্তার সাহেবের কাছে জানতে চাই আর কি কি বিষয়ের উপর আপনি প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। সিঙ্গাপুর ফেরৎ ডাক্তার বললেন-পাইলস বা মলদ্বার দিয়ে রক্ত পড়া সমস্যার ক্ষেত্রে তিনি বিনা অপারেশনে চিকিৎসা পদ্ধতির ওপর প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। আমি তাকে পাইলস-এর ওপর স্বাস্থ্য পাতায় লিখতে বলি। তিনি আমার কথাতে নিমরাজি ছিলেন। তবুও শেষ পর্যন্ত আমার পরামর্শ মেনে নেন। দেশে আধুনিক পাইলস চিকিৎসার স্থপতি বলা যায় এই নবীন সার্জনকে। পাঠক যা আমি বলতে চাই, পাইলস বা মলদ্বার বা পায়ুপথের সমস্যা লেখার ক্ষেত্রে যেসব শব্দ ব্যবহারের প্রয়োজন পড়ে তা মোটেও পাঠযোগ্যনয়। তবুও দেশের লাখ লাখ অপচিকিৎসার শিকার পাইলস রোগীদের সচেতন করতে আমরা পাইলস ও পায়ুপথের নানা সমস্যা নিয়ে সিরিজ রিপোর্ট লিখেছি। আজ বেশীরভাগ পাইলস রোগী আর অপচিকিৎসার শিকার হচ্ছেন না।
দ্বিতীয় আর একটি উদাহরণ দেবো। ইউরোপের একটি দেশে টিন এজারদের গর্ভপাতের ঘটনা আশংকাজনকভাবে বেড়ে গেলো। কোন কিছুতেই বালিকা মেয়েদের গর্ভপাতের হার কমানো যাচ্ছিলো না। তখন দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী অনাকাঙিক্ষত গর্ভধারণ রোধে টিন এজারদের কনডোম ব্যবহারে উৎসাহ দিলেন। পাশাপাশি এটাও বলা হলো, পিতা-মাতাগণ সন্তানদের যেন সমস্যাটি নিরসনে সহায়তা করেন। এমনকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও যৌন শিক্ষার ওপর আলোচনার তাগিদ দেয়া হলো। যদি উন্নত বিশ্ব এ ক্ষেত্রে উদার মনোভাবের পরিচয় না দিতো তাহলে নিশ্চয়ই অনাকাঙিক্ষত গর্ভপাত হ্রাস পেতো না। যৌন শিক্ষার বিষয়টি অবশ্যই স্পর্শকাতর। তবুও সামাজিক প্রয়োজনে এবং আধুনিক চিন্তা চেতনা থেকে মার্জিতভাবে এ বিষয়টি দেখতে হবে।
আর একটি উদাহরণ দেবো। বছর কয়েক আগে আমি একটি জার্মান প্রতিনিধি দলের সদস্য হয়ে কম্বোডিয়া গিয়েছিলাম। কম্বোডিয়ায় কালব্যাধি এইডস এর মরণ ছোবলে দেশটির সামাজিক ও পারিবারিক সংকট ছিলো ব্যাপক। কোনভাবেই পুরুষদের পতিতালয় যাওয়া বন্ধ করা যাচ্ছিল না। কারণ মাত্র এক ডলার অর্থ ব্যয় করলেই একজন বিনোদন সঙ্গিনী পাওয়া যায়। শেষতত দেশটিতে ঘাতক ব্যাধি এইডস প্রতিরোধে স্ত্রীরা একটি বিশেষ ধরনের প্রচারনা চালাতে শুরু করেন। আর তা হচ্ছে, ‘অন্য নারীর কাছে যাও, তবে কনডম ব্যবহার করো। মূল আলোচনায় ফিরে আসি। আমি বিশ্বাস করি প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াতে তরুণ প্রজন্মকে বিপথগামীতা থেকে রক্ষার জন্য যৌন শিক্ষামূলক আরও আলোচনা প্রয়োজন। এই উদ্যোগের কণ্ঠরোধ করলে দেশের লাখ লাখ তরুণ অপচিকিৎসার শিকার হবে। ভেঙ্গে যাবে হাজারো নতুন ঘর। আমি এমন কোন দিন পাইনা যেদিন আমার চেম্বারে শারীরিক কারণে বিয়ে ভেঙ্গে গেছে এমন রোগী আসে না। এমনও দিন আছে দুই তিন জন এ ধরনের পুরুষ রোগী পাই। অথচ আমি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেছি এসব স্ত্রী পরিত্যাক্ত পুরুষদের শতকরা ৯৫ থেকে ৯৮ ভাগের কোন প্রকার শারীরিক সমস্যা নেই। শুধু মাত্র অজ্ঞতার কারণে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে এ ধরনের দুঃখজনক পরিণতি হচ্ছে। সবচাইতে আশ্চর্যজনক ব্যাপার হচ্ছে, যৌন জীবন নিয়ে অজ্ঞতার তালিকায় ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, পোশাক ধারী লোকজন এমনকি সাংবাদিকগণও রয়েছেন। তাই আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি দেশের জনসংখ্যার এই বিরাট অংশকে ভুল ধারণা থেকে রক্ষার জন্য আরও শিক্ষামূলক লেখনি চালু করা উচিৎ। প্রয়োজন গণমাধ্যমের সহযোগিতা এবং সরকার ও সুশীলসমাজের ভূমিকা। কিছু কিছু পাঠকের অনুরোধে আজ থেকে পুরুষের সমস্যা শিরনাম বদল করে হেলপ লাইন করা হলো। আগামীতে হেলপ লাইন বিভাগে নারীদের শারীরিক সমস্যা নিয়ে আলোচনা করা হবে। আগামী সংখ্যায় অজ্ঞতার কারণে বিয়ে ভাঙ্গার কারণ নিয়েও বিস্তারিত লিখবো।
———————-
ডাঃ মোড়ল নজরুল ইসলাম
চুলপড়া, যৌন সমস্যা ও চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ এবং লেজার এন্ড কসমেটিক্স সার্জন
বাংলাদেশ লেজার স্কিন সেন্টার

মূত্রনালির কিছু সমস্যা ও সমাধান


মূত্রনালির কিছু সমস্যা ও সমাধান

 
kidney-problem
শরীর থেকে বর্জ্য নিঃসরণ কিডনি ও মূত্রতন্ত্রের মূল কাজ। শরীরে পানি ও লবণের মাত্রা নিয়ন্ত্রণেও কিডনি মূত্রতন্ত্র রাখে বিশেষ অবদান। বর্জ্য নিঃসরণে মূত্রতন্ত্রের অপর্যাপ্ত ক্ষমতা বা অক্ষমতায় এসব বর্জ্য শরীরে জমা হয়ে আমাদের শরীরের সুস্থ আবহকে বিঘ্নিত করে।
স্বাভাবিক প্রস্রাবের অভ্যাস কেমন?
একজন মানুষ ২৪ ঘণ্টায় সাধারণত ২ দশমিক ৫ থেকে তিন লিটার পানি বা পানীয় পান করে থাকে।
কিডনির কাজ করার ক্ষমতা স্বাভাবিক থাকলে, পারিপার্শ্বিক আবহাওয়ার খুব বড় তারতম্য না হলে প্রতি ২৪ ঘণ্টায় এক হাজার ৫০০ সিসি প্রস্রাব কিডনি তৈরি করে থাকে। আমাদের শরীর থেকে কিছু পানি ঘাম আকারে, কিছু পানি শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে, কিছু পানি মলের সঙ্গে বের হয়ে যায়।
যেহেতু আমাদের প্রস্রাবের থলির স্বাভাবিক ধারণক্ষমতা ৩০০ সিসি, তাই স্বাভাবিকভাবে একজন মানুষ ২৪ ঘণ্টায় পাঁচবার প্রস্রাব করে থাকে।
সাধারণত দিনে চারবার আর রাতে একবার।
তবে নানাবিধ স্বাভাবিক বা অস্বাভাবিক কারণে বারবার প্রস্রাবের প্রবণতা দেখা দিতে পারে, আবার কমেও যেতে পারে। যদি আমরা অতিরিক্ত পানি বা তরলজাতীয় খাবার খাই, তবে প্রস্রাবের পরিমাণ বেশি হয়, বারবার প্রস্রাব হয়। বারবার প্রস্রাব হয় ডায়াবেটিসেও। অন্যদিকে পুরুষের ক্ষেত্রে বয়োবৃদ্ধির সঙ্গে বয়সজনিত স্বাভাবিক পরিবর্তন হিসেবেই বৃদ্ধি ঘটে প্রোস্টেট গ্রন্থির। প্রোস্টেট গ্রন্থি প্রস্রাব প্রবাহে বাধার সৃষ্টি করে। ফলে প্রস্রাবের থলি সব সময় সম্পূর্ণ খালি হয় না। আর বৃদ্ধি পাওয়া প্রোস্টেট সৃষ্টি করে প্রস্রাবের থলির মুখে এক ধরনের অস্বস্তি।
বয়োবৃদ্ধির কারণে নারী-পুরুষনির্বিশেষে সবার প্রস্রাবের থলিরই ধারণক্ষমতা কমে যায়। বারবার প্রস্রাব করার প্রবণতা বেড়ে যায়।
প্রস্রাব করা বা না করার এই নিয়ন্ত্রণ কি সব সময় রক্ষা করা সম্ভব?
না। তবে অবশ্যই তা স্বাভাবিক নয়। নানা ধরনের স্নায়ুবিক অসুস্থতা, প্রস্রাবের থলির কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে যেসব স্নায়ু তার বৈকল্য বা সমন্বয়হীনতা, প্রস্রাব প্রদাহে, হরমোনের ভারসাম্যহীনতা বৃদ্ধি ও প্রস্রাবের থলির নানাবিধ অসুস্থতায় এ নিয়ন্ত্রণ সাময়িক বা স্থায়ীভাবে বিঘ্নিত হতে পারে। ব্যক্তি যখন এ নিয়ন্ত্রণ হারায়, তখন সে আর পারে না নিজ ইচ্ছানুসারে প্রস্রাব করতে। কখনো কখনো কারও কারও ক্ষেত্রে ঘটে অনভিপ্রেত অনিচ্ছা সত্ত্বেও নিজের অজান্তে প্রস্রাব ঝরে যাওয়ার মতো বিব্রতকর ঘটনা, যা কেবল অসুস্থতাই নয়, সামাজিকভাবে বিব্রতকরও বটে। তবে এসবই নিয়ন্ত্রণযোগ্য ও নিরাময়যোগ্য। প্রয়োজন শুধু সঠিক সময়ে সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
স্বাভাবিক প্রস্রাব কেমন?
স্বাভাবিক প্রস্রাব পরিষ্কার, রংহীন বা হলুদাভ। প্রস্রাব পরিত্যাগের প্রক্রিয়াটি বাধাহীন, ব্যথাশূন্য সম্পূর্ণই স্বস্তিকর। প্রক্রিয়াটি শুরু করা যায় নিজ ইচ্ছায়, প্রয়োজন হয় না কোনো চাপ দেওয়ার। গতি থাকে একটানা, শেষ হয় ২০ সেকেন্ডে।
প্রক্রিয়াটি শেষ করে অনুভব করা যায় এক স্বাভাবিক পরিতৃপ্তি।
যদি প্রস্রাব হয় ঘোলা, অতিরিক্ত ফেনাযুক্ত বা অস্বাভাবিক দুর্গন্ধযুক্ত, প্রক্রিয়াটি যদি হয় ব্যথা, জ্বালা-যন্ত্রণাপূর্ণ, তাহলে এটি স্বাভাবিক নয়। এমনটা হতে পারে প্রস্রাবের প্রদাহসহ নানাবিধ অসুস্থতায়। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজন সঠিক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ। প্রস্রাবের রং যদি লাল হয় বা থাকে, তাতে রক্তের অস্তিত্বের বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় নেওয়া জরুরি। ব্যথাশূন্য প্রস্রাব পরিত্যাগ-প্রক্রিয়ায় যদি প্রস্রাবে রক্ত থাকে, তবে তা নিতে হবে অতীব জরুরি ও ঝুঁকিপূর্ণ স্বাস্থ্যসমস্যা হিসেবে। সামান্য কালক্ষেপণও এ ক্ষেত্রে হতে পারে অসামান্য ক্ষতির কারণ। অথচ সময়োপযোগী ব্যবস্থা গ্রহণ, রোগনির্ণয় ও উপযুক্ত চিকিৎসায় এ ধরনের জীবনঘাতী অসুস্থতা নিয়ন্ত্রণ নয় শুধু, অনেক ক্ষেত্রেই নিরাময় সম্ভব।
কাজী রফিকুল আবেদীন
সহকারী অধ্যাপক, ইউরোলজি, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজি

দাঁতে ফাটল দেখা দিলে কী করবেন?


দাঁতে ফাটল দেখা দিলে কী করবেন?

 
দাঁত আমাদের শরীরের খুবই গুরুত্বপুর্ণ অংশ, যা খুবই শক্ত ও মজবুত। শক্ত ও কঠিন হওয়া সত্ত্বেও আকস্মিক আঘাতে দাঁতের বিভিন্ন ক্ষতি হতে পারে। যেমন-হঠাৎ আঘাত পেয়ে দাঁত ভেঙে যেতে পারে, দাঁত টুকরো হয়ে যেতে পারে কিংবা দাঁতের গায়ে দেখা দিতে পারে ফাটল বা চিড়। দাঁতের গায়ে ফাটলের ক্ষেত্রে ডেন্টাল সার্জনরা ফ্র্যাকচার শব্দটি ব্যবহার করে থাকেন। আপাতদৃষ্টিতে এটি মারাত্মক মনে না হলেও চিকিৎসার অভাবে দাঁতের ফ্র্যাকচার জটিল অবস্হার সৃষ্টি করতে পারে। তাই এ সম্পর্কে সকলেরই জানা থাকা প্রয়োজন।
বাড়ির দেয়ালে যখন কোনো ফাটল দেখা যায় তা প্রথমদিকে খুবই সাধারণ থাকে। কিন্তু সঠিক সময়ে মেরামত করা না হলে একসময় তা বিশ্রী হয়ে যায়। এমনকি বেশি দুর্বল হয়ে পড়লে তা ভেঙেও যায়। আমাদের দাঁতের ফ্র্যাকচার এরকমই একটি ফাটল, যা চিকিৎসার অভাবে প্রথমে বিশ্রী ও পরে জটিল আকৃতি ধারণ করে। দাঁতে ফাটল দেখা দিলে প্রথম অবস্হায় দাঁতে ব্যথা থাকতেও পারে আবার নাও থাকতে পারে। তবে প্রথম দিকে বোঝাই যায় না, দাঁতে ফাটল দেখা দিয়েছে। দাঁতে সাধারণ ফ্র্যাকচার হলে সামান্য সমস্যা হয়ে থাকে, যার চিকিৎসা খুবই সহজ। অন্যদিকে মারাত্মক ও গভীর ফ্র্যাকচারে দাঁতে দেখা দিতে পারে প্রচন্ড ব্যথা। এক্ষেত্রে ফ্র্যাকচারে সৃষ্ট ক্ষতি দাঁতের ভেতরের স্নায়ুকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে ফেলে, যার ফলে দেখা দিয়ে থাকে প্রচন্ড অসহনীয় ব্যথা। এ ব্যথা কোনো কোনো সময় স্হির থাকতে পারে, আবার ব্যথা কমতে-বাড়তেও পারে এমনকি কোনো সময় থাকতেও পারে আবার নাও থাকতে পারে।
দাঁতের ফাটল যেহেতু প্রথমদিকে দৃশ্যমান থাকে না অর্থাৎ খালি চোখে দেখা যায় না সেক্ষেত্রে কীভাবে বোঝা যাবে দাঁতে ফাটল দেখা দিয়েছে? বেশিরভাগ মানুষই দাঁতের ফাটল খাদ্যদ্রব্য চিবুতে গিয়ে বুঝতে পারেন। এতে অনেক সময় ব্যথা আবার অনেক সময় সামান্য শব্দসহ অস্বস্তি অনুভব হতে পারে। তবে যাই হোক না কেন, দাঁতে ফাটল হয়েছে ধারণা করা মাত্রই সাবধান হয়ে যেতে হবে। কারণ খাদ্য চিবুতে গিয়ে জোরে চাপ পড়লে দাঁতের ফাটলটি বেড়ে গিয়ে দাঁত ভেঙে যেতে পারে।
দাঁতের ফাটল আমাদের এক বিশ্রী অভিজ্ঞতা। কারণ যদি তা আমরা প্রথমদিকে শনাক্ত করতে না পারি তবে তা এক পর্যায়ে বিশ্রী দাগ হয়ে মুখের সৌন্দর্যকে নষ্ট করে দিতে পারে। অন্যদিকে দাঁতের ফাটলে সৃষ্ট ব্যথা খুবই মারাত্মক। বাড়িতে এর চিকিৎসা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। আপনাকে অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ ডেন্টিস্টের কাছে যেতে হবে। বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা, প্রয়োজনে এক্স-রে করে ডেন্টাল সার্জন শনাক্ত করবেন আপনার দাঁতের ফাটলের ধরন। সাধারণ ফাটলের ক্ষেত্রে অনেক সময় ক্ষতিগ্রস্ত জায়গায় পালিশের মাধ্যমে বিশ্রী দাগ দুর করা হয়। অন্যান্য ফ্র্যাকচারের ক্ষেত্রে সাধারণত ফিলিং ও রুট ক্যানেল চিকিৎসা করা হয়ে থাকে। দাঁতের যে কোনো মারাত্মক ফাটলের ক্ষেত্রে অবশ্যই রুট ক্যানেল করে ক্যাপ করা উচিত। শুধু ক্যাপ করলে ভবিষ্যতে সমস্যা দেখা দিতে পারে।
দাঁতের ফাটল শুধু বিশ্রী অবস্হার সৃষ্টি করে না, ফাটলের জন্য দেখা দিতে পারে জটিল সমস্যাও, যা আক্রান্ত দাঁত থেকে ছড়িয়ে পড়তে পারে সুস্হ দাঁত ও মাঢ়িতে। তাই দাঁতে ফাটল হয়েছে মনে হলেই আর দেরি করবেন না। এক্ষুনি চলে যান একজন অভিজ্ঞ ডেন্টাল সার্জনের কাছে।
————————-
ডা. আওরঙ্গজেব আরু
লেখকঃ কসালটেন্ট, ইলাহী ডেন্টাল কেয়ার, মেরুল বাড্ডা, ঢাকা।

দাঁতে কালো দাগঃ কী করবেন?


দাঁতে কালো দাগঃ কী করবেন?

 
আপনার বয়স ২০ থেকে ২৫। এ সময় মাড়ির দাঁতের ওপর কালো দাগ পড়েছে। প্রচন্ড ব্যথা ও দাঁতে গর্ত হওয়া এবং ফাঁকা সমস্যা চলছে। এমতাবস্হায় আপনার করণীয় কী?
দন্ডরোগের সমস্যা হলেই দন্ত চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। কেননা, এছাড়া কোনো বিকল্প নেই। অবহেলা করলেই উপরোক্ত সমস্যাগুলো সবার ক্ষেত্রেই সাধারণত দেখা দেয়। যা হোক, দন্তক্ষয় রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে দাঁতের ওপর কালো কালো দাগ পড়ে। এ অবস্হাতেই অভিজ্ঞ দন্ত বিশেষজ্ঞ দ্বারা ফিলিং করিয়ে নিলে দাঁতে গর্ত ও ব্যথা হওয়ার ভয় থাকে না। আর চিকিৎসায় অবহেলা করলে গর্ত বড় হবে, ব্যথাও বাড়বে। এসব ক্ষেত্রে ব্যয়বহুল রুট ক্যানেল চিকিৎসা করানো ছাড়া কোনো উপায় থাকে না। দাঁতের ফাঁকা ও উঁচু সমস্যা হলে একজন দন্ত বিশেষজ্ঞ পরীক্ষা করে প্রয়োজন মতো একটি লেবিয়াল বো-ব্রেস বানিয়ে দেবেন। সেটি তার পরামর্শে ৪/৫ মাস ব্যবহার করলে এ সমস্যা থাকবে না। কোনো কোনো রোগী দাঁতের ছিদ্র হওয়ার সমস্যা হলে প্রাথমিক অবস্হায় চিকিৎসা করান না। ফলে ব্যথা বাড়ে। প্রচন্ড ব্যথা সহ্য করতে না পেরে কেউ কেউ লবণ-সরিষার তেল দিয়ে দাঁত মাজেন, যা মোটেও ঠিক নয় অথচ ছিদ্র দেখা দেয়া মাত্রই ফিলিং করালে অ্যাপিক্যাল অ্যাবসেস হওয়ার ঝুঁকি থাকে না। মনে রাখতে হবে, অ্যাপিক্যাল অ্যাবসেস হলে রুট ক্যানেল করে ফিলিং করালে দাঁত রক্ষা করা যায়, যা খুবই ব্যয়বহুল। লক্ষণীয়, দাঁতের সমস্যার লক্ষণ দেখা দেয়া মাত্রই দন্ত চিকিৎসকের পরামর্শ নিলে দাঁত সব সময়ই ভালো থাকে। এছাড়া সমস্যা থাকুক আর না-ই থাকুক, বছরে ২/১ বার দন্ত চিকিৎসককে দেখানো উচিত।
——————–
অধ্যাপক ডা. কে এ জলিল
লেখকঃ পরিচালক, মডার্ন ডেন্টাল ক্লিনিক, ৩১, গ্রিন রোড, ঢাকা

দাঁত শিরশির করলে কী করবেন


দাঁত শিরশির করলে কী করবেন

 
দাঁত শিরশির করা একটি সাধারণ সমস্যা। অনেকেই এ সমস্যায় ভুগে থাকে।
কারণ
– দাঁতের এনামেল ক্ষয় হয়ে গেলে
– দাঁতে ক্যাভিটি বা গর্তের সৃষ্টি হলে
– অনেক দিনের পুরোনো ফিলিং থাকলে
– মাঢ়ি ক্ষয় হয়ে দাঁতের রুট বা গোড়া বের হয়ে গেলে
– দাঁত আঘাতপ্রাপ্ত হলে।
দাঁতের শিরশির বন্ধ করতে হলে যা করবেন-
– একজন দন্ত চিকিৎসকের কাছে গিয়ে শিরশির করার কারণ অনুযায়ী চিকিৎসা
গ্রহণ করা
– দিনে দুইবার সঠিক নিয়মে দাঁত ব্রাশ করা
– নরম ব্রিসলের টুথব্রাশ ব্যবহার করা
– ফ্লোরাইডযুক্ত, ডি সেনসিটাইজিং টুথপেস্ট ব্যবহার করা
– কোমল পানীয়, অ্যালকোহল প্রভৃতি গ্রহণ না করা।
অনেকেই দাঁতের যে অংশ শিরশির করে সে অংশটি আর ব্রাশ করে না। কিন্তু এতে সমস্যা বেড়ে প্রকট আকার ধারণ করতে পারে। কাজেই নিয়মিত দাঁত ব্রাশ করলে দাঁতের অনেক সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যেতে পারে।
ডা· শ্রাবন্তী তালুকদার
সিটি ডেন্টাল কলেজ, ঢাকা।

দাঁত সবল রাখার উপায়


দাঁত সবল রাখার উপায়


healthy-teeth
সুস্থ ও সবল দেহের জন্য দাঁত ও মাড়ির তথা মুখের স্বাস্থ্য ভালো রাখা একান্ত প্রয়োজন। দাঁত ও মুখের ভেতরের স্বাস্থ্যকে অবহেলা করে নীরোগ জীবন আশা করা যায় না। সৌন্দর্যের জন্য যেমন দাঁতের প্রয়োজন, তেমনি সুস্বাস্থ্যের জন্যও দাঁতের প্রয়োজন।
টুথব্রাশ
নরম থেকে মধ্যম টুথব্রাশ ব্যবহার করাই উত্তম। লক্ষ রাখবেন যে শলাকাগুলোর মাথা শক্তভাবে মেলানো ও সব শলাকা মিলে একটি পরিষ্কার সমতল ভূমির মতো তৈরি আছে। তবে যত ধরনের ব্রাশই থাকুক না কেন, দাঁত ও মাড়ির ওপর থেকে খাদ্যকণা দূর করে ফেলাই দাঁত ব্রাশ করার অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য।
সব প্লাক পরিষ্কার হয়েছে কি না, জানার একটি সহজ উপায় আছে। কারণ, এটা খালি চোখে নিখুঁতভাবে বোঝা মুশকিল। তাই এর জন্য রয়েছে এক ধরনের ট্যাবলেট, নাম ‘ডিসক্লোজিং ট্যাবলেট’। এই ডিসক্লোজিং ট্যাবলেট মুখে নিয়ে চোষার পর অথবা পানিতে মিশিয়ে কুলকুচি করলে লুকানো প্লাকগুলো রঙিন হয়ে যায়। তখন খালি চোখে প্লাক খুঁজে পেতে অসুবিধা হয় না। একটি টুথব্রাশ কত দিন ব্যবহার করা যুক্তিসংগত? যখন ব্রাশের শলাকাগুলো সমতল ভূমির মতো অবস্থানে না থেকে ছড়ানো-ছিটানো অবস্থায় চলে আসে এবং শলাকার মাথাগুলো সোজা না থেকে বাঁকা হয়ে যায়, তখন সেই ব্রাশটি ব্যবহারের উপযোগী থাকে না। নিয়মিত ব্যবহূত একটি ব্রাশ সাধারণত দুই থেকে তিন মাস পর্যন্ত ব্যবহার করা যায়।
কতবার দাঁত ব্রাশ করবেন
প্রতিদিন দুবার দাঁত ব্রাশ করা প্রয়োজন—সকালে এবং রাতে ঘুমানোর আগে। প্রতিবারই তিন-চার মিনিট দাঁত ব্রাশের পর প্লাক পরিষ্কার হয়েছে কি না, তা নিশ্চিত হতে হবে।
কীভাবে দাঁত ব্রাশ করবেন
ব্রাশটিকে দাঁতের ৪৫ ডিগ্রি অবস্থানে রেখে দাঁত ও মাড়ির সংযোগস্থল থেকে শুরু করতে হবে। ব্রাশটিকে দাঁতের গোড়ার দিকে খুব ধীরে অথচ শক্তভাবে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে একটু ঝাঁকিয়ে সব দাঁতের ফাঁকের কাছে নিতে হবে। এমনভাবে ব্রাশ করতে হবে, যাতে দাঁতের বাইরের অথবা ভেতরের কোনো অংশ বাদ না পড়ে।
দাঁত পরিষ্কারের জন্য ফ্লুরাইডের ব্যবহার
ফ্লুরাইড দাঁতের ক্ষয়রোগ প্রতিরোধ করে। ফ্লুরাইড এনামেলের সঙ্গে মিলিত হয়ে এনামেলকে আরও শক্তিশালী করে এবং এসিডের আক্রমণ থেকে দাঁতকে রক্ষা করে। আমাদের দেশে ফ্লুরাইড অত্যন্ত সহজভাবে পাওয়ার একমাত্র উপায় ফ্লুরাইড টুথপেস্ট। তবে অন্যান্য উপায়েও ফ্লুরাইড পাওয়া যায়। যেমন—বিশেষভাবে প্রস্তুত ফ্লুরাইড ফোঁটা, ট্যাবলেট, জেলি এবং ফ্লুরাইড-মিশ্রিত পানি (১ পিপিএম)।
উদ্গমকালে প্রায় সব দাঁতই সুস্বাস্থ্যের অধিকারী থাকে। নষ্ট হয় শুধু আমাদের বদ-অভ্যাস এবং অনিয়মিত দাঁত পরিষ্কারের কারণে। বছরে অন্তত দুবার দন্ত চিকিৎসকের কাছে মুখ ও দাঁত পরীক্ষা করানো ভালো। যাঁদের দাঁত ইতিমধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে, তাঁদের মনে রাখা উচিত, দেহের কোনো অংশের যত্ন নেওয়ার দরকার বা প্রয়োজন ফুরিয়ে যায় না। স্বাভাবিক দাঁতকে যেভাবেই হোক, চিকিৎসা অথবা যত্নের মাধ্যমে টিকিয়ে রাখাই শ্রেয়, নিরাপদ। আজকাল বিজ্ঞানের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে দন্ত চিকিৎসার প্রয়োগ ও প্রসার অনেক বেড়ে গেছে। তাই একটি মূল্যবান দাঁত ফেলে দেওয়ার আগে একটু ভেবে দেখা দরকার নয় কি?
ব্রাশ ও পেস্ট ছাড়াও দাঁত পরিষ্কার করা যেতে পারে। যেমন, নিমের ডালকে ব্রাশের মতো ছিলে ব্যবহার করা যায়। লক্ষ রাখতে হবে, দাঁতের ফাঁকে বা দাঁতের গায়ে লেগে থাকা খাদ্যকণা পরিষ্কার হয়েছে কি না। দাঁত পরিষ্কার করার পর একবার আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দেখে নেওয়া ভালো, সত্যি সত্যি দাঁত পরিষ্কার হয়েছে কি না।
অরূপ রতন চৌধুরী
সিনিয়র কনসালট্যান্ট ও বিভাগীয় প্রধান,
ডিপার্টমেন্ট অব ডেন্টিস্ট্রি,
বারডেম হাসপাতাল,
ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ।

দাঁত হোক দাগহীন


দাঁত হোক দাগহীন

 
tooth-care
দাঁত রোগহীন থাকাটাই কিন্তু সব থেকে বড় কথা নয়, দাগহীনও যে রাখতে হবে। সুন্দর দাঁত আত্মবিশ্বাস যেমন বাড়ায়, তেমনি হাসিতে লাগে বাড়তি সৌন্দর্য। দাঁত দাগহীন রাখতে আয়োজন লাগে না খুব বেশি, দরকার শুধু একটু সচেতনতা।
 মুখের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে আর দাঁতের অনাবশ্যক দাগ এড়াতে ছাড়তে হবে কিছু খাওয়াদাওয়া। সঙ্গে ছাড়তে হবে কিছু অভ্যাস। যাঁদের রেড ওয়াইন কিংবা সিগারেটের খুব নেশা, তাঁদের দাঁত কিংবা মুখের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে এমনটা আশা না করাই ভালো। তাই আখেরে দাঁত ভালো রাখতে এগুলোকে না বলতে হবে এখনই। এ ছাড়া নিরীহ দর্শন কোমল পানীয় আর কৃত্রিম ফলের রস আস্তেধীরে দাগ ফেলে দেয় দাঁতে। এত কিছুর পরও যদি এগুলো খেতেই হয়, মুখ ধুয়ে ফেলুন দ্রুত। অথবা একটি আপেল হতে পারে আপনার সমাধান। আপেল কেন? আপেলকে বলা হয় প্রাকৃতিক টুথব্রাশ। একটা আপেল একদিকে যেমন দেহের খানিকটা পুষ্টি-চাহিদা মেটাবে, অন্যদিকে দাঁত ব্রাশের কাজটাও করে দেবে।
 দাঁত কতক্ষণ ধরে মাজতে হবে এমন প্রশ্ন থাকে অনেকের। সত্যিকথা বলতে কি, কতক্ষণ ধরে মাজতে হবে এটা এমন কিছু বড় কথা নয়। আসল কথা হলো, মুখে জমে থাকা খাবারের কণা আর ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াগুলো দূর হলো কি না। পরিষ্কার করতে গিয়ে গায়ের জোরে ঘষলেই কিন্তু দাঁত পরিষ্কার হয় না। আর দাঁত ব্রাশ করার বেশ কিছু নিয়মও আছে। সঠিক পদ্ধতিতে দাঁত ব্রাশ, কমবেশি দুই মিনিট করলেই যথেষ্ট। যত দামেরই হোক, একই ব্রাশ মাসের পর মাস, দিবস-রজনী ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। দাঁত পরিষ্কারের বদলে এই ব্রাশের সাহায্যেই মুখে ঢুকে যাবে অনাবশ্যক সব ব্যাকটেরিয়া।
 মাউথওয়াশ ব্যবহারের প্রবণতা দেখা যায় অনেকের মধ্যেই। অতিরিক্ত মাউথওয়াশ ব্যবহার দাঁতে দাগ ফেলে দিতে পারে। আবার অনেক মাউথওয়াশে থাকে অ্যালকোহল। এটি মুখের টিস্যুকে শুষ্ক করে দেয়। আর মুখ শুষ্ক থাকলে ব্যাকটেরিয়ার জন্য ভারি সুবিধা। প্রায় বিনা বাধায় সে আক্রমণ করতে পারে যেমন খুশি। মাউথওয়াশ থেকে আবার মুখ ফিরিয়ে নেবেন না। মাউথওয়াশেরও আছে মেলা গুণ। তাই মাউথওয়াশ ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
সিদ্ধার্থ মজুমদার

গরমে জ্ঞান হারালে


গরমে জ্ঞান হারালে

 
ঈদ শেষে ফিরছে মানুষ। যে যেভাবে পারে ফিরে আসছে তার কর্মক্ষেত্রে। যানবাহনগুলো তার ধারণ ক্ষমতার অনেক বেশি মানুষ নিয়ে ছুটছে গন্তব্যে। ফিরে আসা মানুষগুলোর দুর্ভোগ বাড়াতে যুক্ত হয়েছে গরম। অতিরিক্ত গরম সহ্য করতে না পেরে কেউ কেউ ঢলে পড়ছে সহযাত্রীর গায়ে। সহযাত্রীও কিংকর্তব্যবিমূঢ়। কী করবেন তিনি? এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলা করার প্রস্তুতিটা নিয়ে নিন এখনই। প্রচণ্ড গরমে সাধারণত চার ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়।
১. হিট সিনকোপ
২. হিট ক্রাম্প
৩. হিট এক্সজশন
৪. হিট স্ট্রোক।
হিট সিনকোপ: অত্যধিক গরমে কাজ করার জন্য রোগী হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে পড়ে। এ ক্ষেত্রে রোগীকে বিছানায় শুইয়ে দিতে হবে। প্রচুর পানি পান করাতে হবে।
হিট ক্রাম্প: অতিরিক্ত গরমে ঘামের সঙ্গে প্রচুর পরিমাণ লবণ বের হয়ে যাওয়ার ফলে হাত-পায়ের মাংসপেশিতে বেদনাদায়ক সংকোচন হয়। রোগীকে ঠান্ডা জায়গায় রাখতে হবে। পানিতে এক গ্রাম খাদ্যলবণ মিশিয়ে আধ ঘণ্টা পর পর রোগীকে খাওয়াতে হবে। শিরাপথে নরমাল স্যালাইনও দেওয়া যেতে পারে।
হিট এক্সজশন: দীর্ঘ সময় ধরে রোদে থাকার জন্য হয়। রোগী পিপাসার্ত এবং দুর্বল হয়ে পড়ে। এ ছাড়া মাংসপেশির অসামঞ্জস্য সংকোচন ঘটে। শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। এতে রোগীকে ঠান্ডা জায়গায় রাখতে হবে। প্রচুর পানি পান করাতে হবে। রক্তে সোডিয়ামের পরিমাণ কমে গেলে হাইপারটনিক স্যালাইন দিতে হবে।
হিট স্ট্রোক: এটি সবচেয়ে মারাত্মক অবস্থা। এতে রোগী কয়েক ঘণ্টার মধ্যে মারাও যেতে পারে। রোগী জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। তাপমাত্রা খুব দ্রুত বেড়ে যায় এবং শরীর থেকে ঘাম ঝরা বন্ধ হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে শরীরের জামাকাপড় খুলে দিতে হবে। রোগীকে ঠান্ডা জায়গায় রাখতে হবে এবং বরফ গলা পানি দিয়ে শরীর স্পঞ্জ করে দিতে হবে।
— সিদ্ধার্থ মজুমদার

গরমে কী খাবেন


গরমে কী খাবেন

 
garome ki khaben
গ্রীষ্মের প্রচণ্ড তাপে মানুষের শক্তির অপচয় হয় অনেক। এ সময় প্রচুর ঘামের কারণে একটু ক্লান্তি, একটু অলসতা মানুষকে কাবু করে দেয়। এ জন্য প্রকৃতি যখন অগ্নি ঝরায়, তখন উচিত এমন খাবার গ্রহণ করা, যা আমাদের শরীরকে ঠান্ডা ও সুস্থ রাখে।
পানি ও পানীয়
প্রতিদিন দুই থেকে আড়াই লিটার পানি পান করতে হবে। ততটা পানি পান করতে হবে, যে পর্যন্ত না প্রস্রাবের রং স্বাভাবিক হয়। পানি শরীরের অভ্যন্তরকে পরিশোধিত করে। এ ছাড়া পিপাসা নিবারণ করে, দেহ-মন স্নিগ্ধ, সতেজ ও পুষ্ট রাখে। কাগজি লেবু, আম, তেঁতুল, দুধ, বেল, ইসবগুল প্রভৃতি দিয়ে শরবত করে খাওয়া যেতে পারে। ইসবগুলের ভুসির শরবত খুবই শীতল। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য, অন্ত্র ও পাকস্থলীর প্রদাহ, রক্ত আমাশয় ইত্যাদিতে কার্যকর। পানীয় কয়েক ধরনের হয়। তৃপ্তিদায়ক: ফলের রস। উদ্দীপক: চা, কফি, কোকো, ওভালটিন ও অ্যালকোহল। পুষ্টিকর: দুধ, মিল্কশেক, হরলিকস, ভিভা, মালটোভা ইত্যাদি। মোটামুটিভাবে বলা যায়, ফলের রসই উৎকৃষ্ট পানীয়। চা, কফি দেহের ক্লান্তি দূর করে এবং কাজে উৎসাহ জোগায়। অত্যধিক গরমে হালকা লিকারের লেবুর চা-ই উত্তম।
সালাদ
গরমের সময় সালাদ একটি উপাদেয় খাবার। দই, শসা, টমেটো, গাজর, কাঁচা পেঁপে, কাঁচা মরিচ, ধনেপাতা, পুদিনাপাতা, পেঁয়াজ ইত্যাদি দিয়ে সালাদ করা যায়। অনেক সময় এর সঙ্গে পাকা পেয়ারা ও আপেল দিয়েও সালাদ করা যায়। সালাদ তৈরি করে ফ্রিজে কিছুক্ষণ রেখে পরে খাওয়া যেতে পারে। এর সঙ্গে টকদই বা কাগজি লেবুও দেওয়া যেতে পারে। লেবুতে থাকে প্রচুর ভিটামিন সি ও পটাশিয়াম, যা দেহকে ঠান্ডা রাখে এবং ত্বক মৃসণ রাখে।
সবজি
গ্রীষ্মকালের সবজি মোটামুটি সবগুলোই ভালো। যেমন: ঝিঙা, চিচিঙ্গা, পটোল, করলা, পেঁপে, কচু, বরবটি, চালকুমড়া, শসা ইত্যাদি। নিরামিষ রান্নায় যাতে চার-পাঁচটি সবজি থাকে, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। এ ছাড়া হালকা মসলা ও স্বল্প তেল সহযোগে শুক্তো রান্না অত্যধিক গরমে বেশ উপাদেয়, তেমনি পেটের গোলযোগের আশঙ্কাও এতে থাকে না।
ডিম, মাছ ও মাংস
গরমের সময় অনেকে বাচ্চাদের ডিম দিতে চান না বদহজমের ভয়ে। অথচ ডিম অত্যন্ত সহজপাচ্য খাবার। এটি ছোট-বড় সবারই ভালোভাবে হজম হয়। তবে ভাজা ডিমের চেয়ে পোচ, অর্ধসেদ্ধ ও পূর্ণসেদ্ধ ডিম তাড়াতাড়ি হজম হয়। মাংসের মধ্যে মুরগির মাংস সহজপাচ্য। সমুদ্রের মাছে সোডিয়াম থাকে প্রচুর। পুকুর ও নদীর মাছ এ সময় উত্তম। একটি ধারণা আছে, মাংসের চেয়ে মাছ কম পুষ্টিকর। আসলে মাছ সহজে হজম হয় বলেই হয়তো এ ধরনের ধারণা গড়ে উঠেছে। দুটিরই প্রোটিনের মান সমান।
ফল
শরীর রক্ষায় ফলের গুরুত্ব রয়েছে। গ্রীষ্ককালে আমাদের দেশে প্রচুর ফল পাওয়া যায়। যেমন: আম, কাঁঠাল, জাম, পেয়ারা, লিচু, তরমুজ, ফুটি, বাঙি ইত্যাদি। অনেকের অভ্যাস থাকে হঠাৎ এক দিনে বেশ কয়েকটি ফল একসঙ্গে খাওয়ার। এতে খাবারের মধ্যে কোনো সমতা থাকে না। এ ধরনের অভ্যাস না করে প্রতিদিনই কিছু না কিছু ফল খেলে ভিটামিন ও লৌহের ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব। পেয়ারা, কলা, পাকা পেঁপে ও আনারস ত্বককে সুন্দর ও মসৃণ রাখে। এ ছাড়া রক্তে ইউরিক এসিড বেড়ে গেলে আনারসে উপকার পাওয়া যায়। তরমুজ ও ফুটি বেশ ঠান্ডা। রক্তশূন্যতায় উপকারী। এ সময় পাকা বেলের শরবত বেশ উপকারী। এতে যেমন পেটের সমস্যা দূর হয়, তেমনি শরীর ঠান্ডা রাখে এবং পটাশিয়ামের ঘাটতি মেটায়।
অসুখ-বিসুখ
ঘামাচি: অত্যধিক গরমে ঘামাচি দেখা দেয়। এটি যন্ত্রণাদায়ক ব্যাপার। এর জন্য চাই সকাল-বিকেলে দুবার গোসল করা। ত্বকে যাতে ঘাম জমতে না পারে, সেদিকে খেয়াল রাখা। ঘাম ও ধুলাবালু জমেই ঘামাচির উৎপত্তি হয়।
শরীর ঠান্ডা রাখার জন্য এ সময় লেবুর রস, তেঁতুলের রস, কাঁচা আমের শরবত ও বেলের শরবত খাওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া ইসবগুল, ঘৃতকুমারী (অ্যালোভেরা) ও তোকমার শরবত উপকারী।
ডায়রিয়া: এ সময় ছোট-বড় অনেকেই ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়। অসুস্থতার প্রথম দিকে স্যালাইন দিতে হবে, যাতে পানিশূন্যতা রোধ করা যায়। তারপর দিতে হবে উচ্চ ক্যালরিযুক্ত সহজপাচ্য খাবার। খাবারের মধ্যে থাকবে জাউভাত, মাছের হালকা ঝোল, সুসেদ্ধ জল, মুরগির স্যুপ, শসার স্যুপ, আলুর পাতলা ঝোল বা আলুভর্তা, কাঁচকলার পাতলা ঝোল বা ভর্তা ইত্যাদি। তেল-মসলা যত কম থাকে, তত ভালো। ডিম সেদ্ধ বা পোচ করে শুধু সাদা অংশ এ সময় দেওয়া যেতে পারে।
হাত-পা জ্বালা: গরমের দিনে অনেকেরই হাত-পা জ্বালা করার প্রবণতা দেখা যায়। এ রকম হলে দুপুর ও রাতে খাওয়ার সময় ধনেপাতা ও পুদিনাপাতার চাটনি করে খেলে শরীর ঠান্ডা থাকবে। ইচ্ছে হলে এই চাটনির সঙ্গে লেবু বা তেঁতুলের রস দেওয়া যেতে পারে। আখের গুড় দিয়ে তেঁতুলের রস খেলেও হাত-পা জ্বালা কমবে। তেঁতুলে যেমন পটাশিয়াম আছে, তেমনি এতে কোলেস্টেরলও কমে।
হজমের গোলমাল: হজমের গোলমাল থাকলে এ সময় প্রতিদিনই দই খাওয়া ভালো। এতে আছে ল্যাক্টোক্যাসিলাস জীবাণু, যা আমাদের অন্ত্রে পৌঁছে হজমে সাহায্য করে। এ ছাড়া যদি ডিসপেপসিয়া দেখা দেয়, তখন বেল খুবই উপকারী। পাকা অথবা কাঁচা উভয় ধরনের বেলই ওষুধের কাজ করে। পাকা বেলের শরবত ঠান্ডা ও আমাশয়ের জন্য ভালো।
গরমে সারা দিনের খাবারে যত ভাজা-ভুনা এড়ানো যায়, তত ভালো। কম মসলায় রান্না হলে ভালো হয়। যেমন: মাছের পাতলা ঝোল, শুক্তো, চিঁড়া-কলা, দই, দুধ-সেমাই, আম-আমড়া ইত্যাদির টক, পাতলা জল ইত্যাদি। কোনো কোনো সময় মাছ-মাংস বাদ দিয়ে নিরামিষ খাওয়া যেতে পারে। মোট কথা, গ্রীষ্মের খাবার হবে জলীয়, সহজপাচ্য ও হালকা মসলাযুক্ত, যাতে দেহ-মন—দুই-ই সজীব ও সতেজ থাকে।
আখতারুন নাহার
প্রধান পুষ্টি কর্মকর্তা, বারডেম হাসপাতাল

সারাদিন পরিশ্রমের পর


সারাদিন পরিশ্রমের পর

 
দিনভর হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমের পর শরীরে যখন খুব ব্যথা অনুভূত হয়, তখন অনেকেই পেইন কিলার সেবন করতে আগ্রহী হন। কিন্তু পেইন কিলারের চেয়ে এ সময় সবচেয়ে উপকারী হচ্ছে ঠান্ডা গোসল। সারাদিনের পরিশ্রমের ফলে পেশীর রক্ত নালীকাগুলোতে কিছু ক্ষত দেখা দেয় এবং কিছু বর্জ্য দ্রব্য উৎপন্ন হয়। তাই এ সময় ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করলে রক্ত নালীগুলো সঙ্কুচিত হয়। ফলে পেশীতে প্রদাহ এবং ঘা হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।
ডা. কাজী মাহবুবা আক্তার

সন্তানের ওপর মা-বাবার রক্তের গ্রুপের প্রভাব

সন্তানের ওপর মা-বাবার রক্তের গ্রুপের প্রভাব

 
blood-group
মায়ের রক্তের গ্রুপ এবং তাঁর সন্তানের রক্তের গ্রুপ দুটোর সমীকরণের ফলাফল গর্ভস্থ ভ্রূণ বা নবজাতকের ওপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে। ধরা যাক, গর্ভধারিণী মায়ের রক্তের গ্রুপ আরএইচ নেগেটিভ এবং তাঁর স্বামীর রক্তের গ্রুপ আরএইচ পজেটিভ। এই যোগসূত্রে আরএইচ পজেটিভ শিশুর জন্ম হতে পারে। এই মা যদি আগে থেকে আরএইচ রক্তকোষ দ্বারা সংবেদনশীল থাকেন, তাহলে গর্ভস্থ আরএইচ পজেটিভ বাচ্চা আরএইচ হিমোলাইটিক অসুখে কোনো না কোনো মাত্রায় আক্রান্ত হবে। আর মা যদি ডেলিভারির পরে প্রতিক্রিয়ার আওতায় আসেন, সে ক্ষেত্রে পরবর্তী সব আরএইচ পজেটিভ গর্ভস্থ শিশু ঝুঁকিতে থাকবে।
আরএইচ(রিসাস) ব্লাড গ্রুপ
ও-এ-বি ব্লাড সিস্টেমের সাথে কারো শরীরে রক্ত সঞ্চালন কিংবা নবজাতক শিশুতে মারাত্নক হেমোলাইটিক ডিজিস তৈরিতে আরএইচ ব্লাড গ্রুপ খুব গুরুত্বপূর্ণ।
‘এবিও’ রক্তের গ্রুপ সিস্টেম
একদা যুদ্ধক্ষেত্রের অনুমান-পর্যবেক্ষণ—সিদ্ধ তথ্য গবেষণায় সিদ্ধি লাভ করে জানা গেছে, মূল রক্তের গ্রুপ হলো চারটি: ‘এ’, ‘বি’, ‘এবি’ এবং ‘ও’।
 ‘ও’ রক্তের গ্রুপ যেকোনো রক্তের শ্রেণীতে মেশালে তা জমাট বাঁধে না। তাই একে ‘ইউনিভার্সেল ডোনার’ বলা হয়।
 ‘এ’ গ্রুপের রক্ত ‘এ’ অথবা ‘এবি’র সঙ্গে মিশতে পারে যদি তা ‘বি’ বা ‘ও’-এর সঙ্গে মেশে, তবে জমাট বাঁধবে।
 একইভাবে ‘বি’ রক্তকোষ শ্রেণী নিরাপদে ‘বি’ বা ‘এবি’র সঙ্গে মেশানো যায়, কখনো ‘ও’ বা ‘এ’-এর সঙ্গে নয়।
 এবি রক্তের শ্রেণী শুধু এবির সঙ্গে মেশে আর কারও সঙ্গে নয়।
তবে প্রধান এই চার রক্তের গ্রুপ অ্যান্টিজেনের বাইরেও ক্যাপিটাল সি—স্মল সি, ডি, বড় ই-ছোট ই, বড় কে = ছোট কে, এম, এন এবং আরও অনেক জট পাকানো রক্তশ্রেণীর অস্তিত্ব রয়েছে।
আরএইচ ‘ডি’ রক্তের শ্রেণীর গরমিল
ভাগ্য ভালো, সব রক্তশ্রেণী দুর্যোগ তৈরি করে না। কিন্তু ‘ডি’ অ্যান্টিজেনের গরমিলের চিত্র খুব ভয়াবহ হতে পারে।
 তবে মাতা-পিতা দুজনই যদি ‘ডি’ নেগেটিভ হন, বাচ্চা কখনো ‘ডি’ পজেটিভ হবে না। সুতরাং বিপদমুক্ত।
 কিন্তু ‘ডি’ নেগেটিভ মায়ের সঙ্গে ‘ডি’ পজেটিভ স্বামীর যোগসূত্রে বাচ্চা ‘ডি’ পজেটিভ, ‘ডি’ নেগেটিভ দুটোর যেকোনো একটা হতে পারে। এ ক্ষেত্রে ‘ডি’ পজেটিভ বেবি হলেই কেবল বিপদ।
 গর্ভস্থ ভ্রূণ ‘ডি’ পজেটিভ হলেও প্রথম বাচ্চা এতে আক্রান্ত হয় না। প্রথম বাচ্চা জন্মদানের সময় আরএইচ পজেটিভ রক্তকোষজাত অ্যান্টিডি-অ্যান্টিবডি উৎপন্ন করে, যা পরবর্তী সময়ে গর্ভস্থ শিশু থেকে বা রক্ত সরবরাহতন্ত্রে প্রাপ্ত যেকোনো ‘ডি’ পজেটিভ রক্তকোষ পেলে সমূহ সংহারে উদ্যোগী হয়। এভাবে আরএইচ নেগেটিভ মা তাঁর ডি-অ্যান্টিজেন নিয়ে কতটা সংবেদনশীল হয়েছেন, তার মাত্রা মায়ের গর্ভকালীন সিরাম ইনভাইরেক্ট কুম্বসটেস্ট দ্বারা নির্ণয় করা যায়। প্রতিক্রিয়ার মাত্রা যত বেশি হবে, গর্ভস্থ ভ্রূণ তত বেশি ক্ষতির শিকার হবে; যার সর্বাধিক নমুনা হচ্ছে ‘হাইড্রপস ফিটালিস’।
প্রতিরোধ
 সবাই অবগত আছেন থ্যালাসেমিয়া সন্তান জন্মদান প্রতিরোধে বিবাহপূর্ব রক্ত পরীক্ষা করিয়ে বর বা কনে উভয়ে এ রোগের বাহক কি না জেনে নিয়ে চিকিৎসার আশ্রয় নেওয়া যায়। এ ক্ষেত্রেও গর্ভপূর্ব হতে মা ও বাবার রক্তশ্রেণী জানা গেলে মা, বাবা ও অনাগত সন্তানের রক্তশ্রেণীর গরমিলজনিত সংকট মোকাবিলায় প্রতিরোধমূলক পরিকল্পনা গ্রহণ করা সহজ।
 সব আরএইচ নেগেটিভ মাকে গর্ভকালীন ২৮ ও ৩৪ সপ্তাহে, প্রসব-পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে, গর্ভপূর্ব সময়ে গর্ভপাত, জরায়ু থেকে রক্তপাত হয়ে থাকলে চিকিৎসক ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী ‘অ্যান্টিডি ইমিউনোগ্লোবুলিন’ দেওয়ার মাধ্যমে ভয়ানক এ অসুখ থেকে অনাগত সন্তানকে সুরক্ষা দেওয়া সম্ভব।
প্রণব কুমার চৌধুরী
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল

রক্তের গ্রুপ এবং বিয়ে

রক্তের গ্রুপ এবং বিয়ে, বাচ্চা


ভুল বোঝাবুঝি এড়াতে সবাইকে “সন্তানের ওপর মা-বাবার রক্তের গ্রুপের প্রভাব“- এই লেখাটি পড়ে নেয়ার অনুরোধ করা হলো।
রক্তের গ্রুপ ম্যাচ করে না মানেই বিয়ে করা যাবে না- এটা ভুল ধারণা। রক্তের গ্রুপ ম্যাচ না করলে বাচ্চা নেয়ার সময় একটু সতর্ক হলে অনাগত সন্তানকে সুরক্ষা দেওয়া সম্ভব।
ম্যাচ করে না
ছেলেমেয়ে
ও, বি
বিও, এ
এবিও, এ, বি
Rh পজেটিভRh নেগেটিভ
ম্যাচ করে
ছেলেমেয়ে
এ, এবি
বিবি, এবি
ও, এ, বি, এবি
এবিএবি
Rh পজেটিভRh পজেটিভ
Rh নেগেটিভRh পজেটিভ, Rh নেগেটিভ